বর্তমান সময়ে ‘ডিজিটাল ওয়ালেট বা মোবাইল ওয়ালেট প্রযুক্তি’ আমাদের দৈনন্দিন আর্থিক জীবনের এক অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। এই ক্ষেত্রে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো Google Wallet। এটি শুধু একটি অ্যাপ নয়, বরং স্মার্টফোন-ভিত্তিক পেমেন্ট ও পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশক। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য ও ডকুমেন্ট সংরক্ষণ, সব কিছুতে’ই ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া স্পষ্ট। এই প্রেক্ষাপটে, Google Wallet একটি নিরাপদ, সহজ এবং বহুমুখী ডিজিটাল ওয়ালেট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তো চলুন, গুগল ওয়ালেট অ্যাপটির বৈশিষ্ট্য, ব্যবহারবিধি, নিরাপত্তা এবং সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
সাল | Google Wallet এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস |
---|---|
২০১১ | Google Wallet প্রথমবার চালু হয়। এটি NFC প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল পেমেন্ট সেবা প্রদান করত। |
২০১৮ | Android Pay এবং Google Wallet একীভূত হয়ে Google Pay নামে নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। |
২০২২ | Google Pay - এর পাশাপাশি নতুন করে Google Wallet পুনরায় চালু করা হয়। এতে ডিজিটাল কার্ড, আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট, টিকিট, ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ইত্যাদি সংরক্ষণের সুবিধা যোগ হয়। |
Google Wallet কী ঃ
Google Wallet হলো গুগলের তৈরি একটি মোবাইল অ্যাপ, যা ব্যবহারকারীদের সহজে এবং নিরাপদে ডিজিটাল পেমেন্ট করতে সহায়তা করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের কার্ড, টিকিট এবং ব্যক্তিগত আইডেন্টিফিকেশন সংরক্ষণ করতে পারবেন। এছাড়াও, এতে রয়েছে NFC ভিত্তিক Tap-to-Pay ফিচার, যার মাধ্যমে মাত্র ফোন ট্যাপ করে’ই পেমেন্ট সম্পন্ন করা যায়। Google Wallet মূলত Android ডিভাইসের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং এটি Google Pay এর সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে, যা ব্যবহারকারীদের আরও উন্নত এবং সাবলীল পেমেন্ট অভিজ্ঞতা প্রদান করতে সহায়তা করে।
Google Wallet কীভাবে কাজ করে ঃ
Tap to Pay : আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করে পয়েন্ট অফ সেল (POS) মেশিনে ট্যাপ করার মাধ্যমে সহজে এবং দ্রুত লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। Google Wallet লেনদেনের সময় Google - এর আধুনিক tokenization প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে আসল কার্ড নম্বরটি গোপন থাকে এবং নিরাপদে অর্থপ্রদান নিশ্চিত হয়।
Digital Card ও আইডেন্টিটি সংরক্ষণ : Google Wallet আপনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল কার্ড এবং পরিচয়পত্র সংরক্ষণ করতে পারে, যেমন -
- ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড
- বিমান বা যাত্রার বোর্ডিং পাস
- পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাস
- কুপন ও ইভেন্ট টিকিট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স (যেসব দেশে সমর্থন রয়েছে)
রিয়েল টাইম নোটিফিকেশন : প্রতিটি লেনদেনের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনের রশিদ ও অ্যালার্ট প্রদান করা হয়, যা আর্থিক নিরাপত্তা ও লেনদেনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
Google Wallet ব্যবহার করার নিয়ম ঃ
ধাপ - ১ : প্রথমে Android ফোনে Google Play Store থেকে Google Wallet অ্যাপটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন।
ধাপ - ২ : ইনস্টল সম্পন্ন হলে, Google Wallet অ্যাপটি চালু করে Google অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইন ইন করে নিন।
ধাপ - ৩ : তারপর অ্যাপের মধ্যে “Add to Wallet” অপশনে ক্লিক করে আপনার ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বা যেকোনো ডিজিটাল আইডি এড করে নিতে পারবেন। কার্ড বা আইডি যুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন কার্ড নম্বর, মেয়াদ ইত্যাদি সঠিক ভাবে প্রদান করতে হবে। (কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক বা কার্ড কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত ভেরিফিকেশনের জন্য OTP, ফোন কল এর প্রয়োজন হতে পারে)।
ধাপ - ৪ : ফোনের Settings থেকে NFC চালু করে, Google Wallet অ্যাপের সেটিংস থেকে Tap to Pay ফিচারটি সক্রিয় করুন।
ধাপ - ৫ : দোকানে বা যেকোনো পয়েন্ট অফ সেল (POS) মেশিনে গিয়ে ফোনটি NFC রিডার এর কাছে ট্যাপ করুন। Google Wallet স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ডিফল্ট কার্ড থেকে অর্থপ্রদান সম্পন্ন করবে। লেনদেন সফল হলে ফোনে রিয়েল টাইম নোটিফিকেশন চলে আসবে।
অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড আপডেট বা রিমুভ করতে পারবেন। কার্ড এড করা ছাড়াও আপনি আপনার Google Wallet অ্যাপে বোর্ডিং পাস, কুপন, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাস, টিকিট ইত্যাদি যোগ করে সেগুলোও ব্যবহার করতে পারবেন।
Google Wallet এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঃ
নিরাপত্তা ফিচার | বিস্তারিত |
---|---|
Tokenization | লেনদেনের সময় আসল কার্ড নম্বর ব্যবহার না করে একটি টোকেন ব্যবহার করা হয়, যা তথ্য চুরি প্রতিরোধের সহায়তা করে। |
Biometric Lock | ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি ব্যবহার করে অ্যাপটি নিরাপদ রাখা যায়, যাতে কেবলমাত্র অনুমোদিত ব্যবহারকারীরাই অ্যাক্সেস করতে পারে। |
Encrypted Transfer | Google Wallet - এর সব ডেটা শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার করে সংরক্ষণ ও আদান-প্রদান করা হয়, ফলে তথ্য থেকে যায় নিরাপদ। |
এই সব নিরাপত্তা ফিচার Google Wallet ব্যবহারকারীদের আর্থিক ও ব্যক্তিগত তথ্যকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় রাখে।
Google Wallet - এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা ঃ
সুবিধা | সীমাবদ্ধতা / চ্যালেঞ্জ |
---|---|
ঝামেলাহীন Contactless Payment সিস্টেম | iPhone - এ Google Wallet নেই (শুধু Android-এ) |
কার্ড, কুপন ও টিকিট এক জায়গায় সংরক্ষণ | সব দেশে এখনো সেবা চালু হয়নি |
উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা (Tokenization, Biometric, Encryption) | সব POS মেশিনে NFC সাপোর্ট করে না |
ট্রাভেল ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সহায়ক পাস সংরক্ষণ | ইন্টারনেট ছাড়া কিছু ফিচারে সীমাবদ্ধতা |
Google ইকোসিস্টেমের সাথে স্মার্ট ইন্টিগ্রেশন (Gmail, Maps ইত্যাদি) | NFC না থাকা ফোনে Tap to Pay কাজ করে না |
0 Comments
post a comment